সিপ্লাস প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাদের যারা বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্র থেকে শাস্তিমূলক নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে হানিফ বলেন, “প্রথমত একটি বিষয় জানিয়ে রাখি, মেয়র মনোনয়ন দেওয়া হয় দলীয় মনোনয়ন বোর্ড থেকে। কাউন্সিলরদের সমর্থন দেওয়া হয়। এই সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে এখানে বোর্ড হয়ত যেটা যাচাই-বাছাই করে যোগ্য মনে করেছে, সমর্থন দিয়েছে।
“আজকে এখানে বসেছিলাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমি এখানে একটা কাজে এসেছিলাম, সে হিসেবে আজকে মহানগর কমিটির সাথে বৈঠক করেছি।”
মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমর্থিত যারা কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন, এই সমর্থনের বাইরে যারা আছেন তাদেরকে আমরা বার বার অনুরোধ করেছিলাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। যারা এখনও প্রত্যাহার করে নাই তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
“কেন্দ্রে আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে এটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওয়ার্কিং কমিটির মত ছাড়া একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পারেন যে কোনো বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে। প্যান্ডেমিকের কারণে এখনও সেটা সম্ভব হয়নি। আশা করি, আগামী এক-দুদিনের মধ্যেই দলীয় সমর্থনের বাইরে যারা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে আছেন তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে পাব।”
যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দলীয় সমর্থনের বাইরে যারা নির্বাচন করছেন এবং তাদেরকে যারা সমর্থন করছেন, যাদের বিরুদ্ধে এ রকম তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এরপর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ঢাকায় সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদ উন্মুক্ত রাখা ছিল এবং পরে বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে যারা বিজয়ী হয় তাদের দল মেনে নেয়, চট্টগ্রামেও সে পরিস্থিতি হবে কি না?
জবাবে মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “পরিষ্কারভাবে বলছি, এখানে কোনো ওপেন রাখা হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী মেয়র এবং দলীয় সমর্থিত প্রার্থী কাউন্সিলর, এর বাইরে আর কেউ যদি নির্বাচন করে বা সে নির্বাচনে সহায়তা করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন।
গতবারের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৪ জন এবার মনোনয়ন পাননি। তাদের মধ্যে ১০ জন এখনও নির্বাচনের মাঠে আছেন বিদ্রোহী হিসেবে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই বিদায়ী মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী, যিনি নিজে এবার মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়ে পাননি।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক বা একাধিক মামলাও আছে। ইতোমধ্যে নগরীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরোধ থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যাতে দুজন নিহত হয়েছে।
নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হানিফ বলেন, “ইতোমধ্যে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। তারা কাজও শুরু করেছে। আর যাতে এই নির্বাচনকে ঘিরে কোনো রকমের সহিংসতা না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করি নির্বাচনকেন্দ্রিক আর কোনো সহিংসতা আমরা দেখতে পাব না।”
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে যেসব পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে দুটি ধাপে, সবগুলো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে।
“সমস্যা হলো যে, বিএনপি তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে পরাজিত হলেই তারা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা রকম কথা বলে।”
বিএনপির সমালোচনা করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “নির্বাচন চলাকালীন অবস্থায়ও কিন্তু বিএনপির প্রার্থীরা তাদের স্ব স্ব এলাকায় নির্বাচন ভালো হচ্ছে বলার পরও যখন ফলাফল আসে তাদের বিপক্ষে, তখন কেন্দ্রীয় অফিস থেকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নির্বাচন নিয়ে নানা রকম অভিযোগ করে। এটা বিএনপির পুরানা অভ্যাস। জয়লাভ করলে নির্বাচন ভালো, পরাজিত হলেই নির্বাচন খারাপ। এটাই বিএনপির এখন মূলনীতি হয়েছে।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে। কাউন্সিলরের সবগুলো পদে বিএনপির একক প্রার্থীরা ভোটে লড়ছেন।